যুবলীগ ঢাকা মহানগরীর সদ্য বহিষ্কৃৃত সভাপতি ইসমাঈল চৌধুরী সম্রাট গ্রেফতার হওয়ার পর অনেকেই আতঙ্কে রয়েছেন। এরা সবাই কোনো-না-কোনোভাবে সম্রাটের কাছ থেকে সুবিধাভোগী। মামলায় সম্রাটকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করলে ওই সব ব্যক্তির নাম বেরিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন তারা। এর মধ্যে দলেরই সিনিয়র অনেক নেতা রয়েছেন। সম্রাটের ঘনিষ্ঠজনেরা বলেছেন, দু’হাতে সম্রাট কোটি কোটি কামালেও তার কাছে তেমন কিছু নেই। এসব টাকাই তিনি বিভিন্ন জনের পেছনে খরচ করেছেন।
সম্রাট আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর নজরদারিতে, যেকোনো সময় ভালো সংবাদ পাওয়া যাবে, এমন তথ্য এবং সম্রাটকে নিয়ে সাধারণ মানুষের বিভিন্ন রকম জল্পনা-কল্পনার ডালপালা ও দীর্ঘ নাটকের পর গত ৬ অক্টোবর কুমিল্লা থেকে গ্রেফতার করা হয় ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের সভাপতি ইসমাঈল চৌধুরী সম্রাটকে। সম্রাট গ্রেফতার হবেন কি হবেন না তা নিয়ে দীর্ঘ কয়েক দিন ধরে নানা গুঞ্জন চলছিল। সম্রাটকে গ্রেফতারের পর তার কাকরাইলের অফিস ও বাসাসহ বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালানো হয়। পরে বণ্যপ্রাণী সংরক্ষণ আইনে তাকে ছয় মাসের জেল দিয়ে আদালতে প্রেরণ করা হয়। গতকাল রাজধানীর রমনা থানায় তার বিরুদ্ধে অস্ত্র ও মাদক আইনে মামলা হয়েছে। এই মামলায় সম্রাটকে রিমান্ডে নেয়া হবে বলে জানা গেছে। আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর এক কর্মকর্তা গতকাল বলেছেন, এই মামলায় সম্রাটকে রিমান্ডে নেয়া হবে।
এ দিকে, সম্রাটের একাধিক ঘনিষ্ঠ সূত্র বলেছে, সম্রাট গ্রেফতার হওয়ার পর থেকেই অনেকে চরম আতঙ্কের মধ্যে পড়েছেন। এরা বিভিন্ন সময় সম্রাটের কাছ থেকে সুবিধা নিয়েছেন। এরমধ্যে দলের সিনিয়র অনেক নেতাও রয়েছেন। যারা বিভিন্ন অজুহাতে সম্রাটের কাছ থেকে অর্থ হাতিয়েছেন। ঢাকায় কোনো সমাবেশ হলে সম্রাটের কাছ থেকেই অর্থ নেয়া হতো বলে একাধিক সূত্র জানায়। এ ছাড়া কোনো নেতা বিদেশ যাবেন, চিকিৎসা করাবেন সে ক্ষেত্রেও সম্রাটের কাছ থেকে অর্থ নিতেন। সম্প্রতি দলের এক সিনিয়র নেতা গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে সিঙ্গাপুর পাঠানো হয়। সম্রাট ও খালেদ সেখানে দেড় মাস উপস্থিত থেকে ওই সিনিয়র নেতার চিকিৎসা করিয়েছেন বলে জানা যায়। তার এবং তার পরিবারের পেছনে সম্রাট ও খালেদের মোট ১৮ কোটি টাকা খরচা হয়েছে বলে জানা যায়। ওই নেতা এখন পুরোপুরি সুস্থ। অপর একটি সূত্র জানায়, গত প্রায় চার বছর ধরে ক্যাসিনো ব্যবসা চালানো হলেও এর টাকা যেভাবে আসত সেভাবেই চলে যেত। দান-অনুদানের নামেও অনেক সংগঠন ও ব্যক্তি সম্রাট, খালেদ ও গোলাম কিবরিয়া শামীমের কাছ থেকে অর্থ নিয়েছেন বলে জানা যায়। কিছু লোক আছেন যারা সম্রাটের কাছ থেকে আরো অনেক সুবিধা নিয়েছেন বলে অভিযোগ আছে। আবার অনেকে সম্রাটের নাম ভাঙিয়েই কোটি কোটি টাকার মালিক হয়েছেন। ওই লোকগুলো এখন চরম আতঙ্কে আছেন। সম্রাটকে জিজ্ঞাসাবাদে ওই লোকগুলোর নাম বেরিয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। তাতে সামাজিকভাবে তারা চরমভাবে হেয় হওয়ার ভয় পাচ্ছেন।
প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে দেশে ক্যাসিনো ও দুর্নীতিবিরোধী অভিযান চলছে। গত ১৮ সেপ্টেম্বর রাজধানীর ফকিরাপুলের ইয়ংমেন্স ক্লাবে অভিযান চালায় র্যাব। ওই ক্লাবটির সভাপতি ছিলেন ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়া। ক্লাব থেকে ১৪২ জন নারী-পুরুষকে জুয়া খেলার অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়। ওই রাতে ওয়ান্ডারার্স ক্লাব, মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ক্রীড়াচক্র এবং বনানীর গোল্ডেন ঢাকা বাংলাদেশ ক্যাসিনোতে অভিযান চালান র্যাব সদস্যরা। ২০ সেপ্টেম্বর কলাবাগান ক্রীড়াচক্রে অভিযান চালান র্যাব সদস্যরা। ২১ সেপ্টেম্বর চট্টগ্রামের মোহামেডান, আবাহনী ও মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ক্রীড়াচক্রে অভিযান চালানো হয়। ২২ সেপ্টেম্বর রাজধানীর আরামবাগের আরামবাগ ক্লাব, মোহামেডান ক্লাব, ভিক্টোরিয়া ক্লাব, দিলকুশা ক্লাব ও বাড্ডার ইস্টওয়েস্ট ক্লাবে অভিযান চালানো হয়। ওই দিন গুলশানের একটি স্পা সেন্টারেও অভিযান চালানো হয়। ২৩ সেপ্টেম্বর ফু-ওয়াং ক্লাবে অভিযান চালান আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থার সদস্যরা। এর বাইরে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের সাথে জড়িত থাকার অভিযোগে গ্রেফতার করা হয় যুবলীগ নেতা গোলাম কিবরিয়া শামীমকে। তার বিরুদ্ধে টেন্ডারবাজির অভিযোগ আনা হয়েছে। অসামাজিক কার্যকলাপের সাথে জড়িত থাকার অভিযোগে গ্রেফতার করা হয় মোহামেডান ক্লাবের লোকমান হোসেনকে। ২৪ সেপ্টেম্বর গ্রেফতার করা হয় গেন্ডারিয়া থানা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি এনামুল হক এনু এবং যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রুপন ভূঁইয়া। তাদের কাছ থেকে বিপুল টাকা, স্বর্ণালঙ্কার ও অস্ত্র-গুলি উদ্ধার করা হয়। সর্বশেষ গত ৬ অক্টোবর কুমিল্লা থেকে গ্রেফতার করা হয় সম্রাট এবং যুবলীগ মহানগরী দক্ষিণের সহসভাপতি আরমানকে। আরো অনেকে নজরদারির মধ্যে আছেন বলে জানা গেছে।
আবু সালেহ আকন
Leave a Reply